বুঝে পড়ি লিখতে শিখি। রচনামূলক প্রশ্ন ও উত্তর। বাংলা। ৭ম শ্রেণি।
পরীক্ষার প্রস্তুতি
বুঝে পড়ি লিখতে শিখি
বাংলা
৭ম শ্রেণি
রচনামূলক প্রশ্ন ও উত্তর (দৃশ্যপটবিহীন)
১) প্রায়োগিক লেখা কী? প্রায়োগিক লেখার বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর: বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে লেখা রচনা বা বাস্তবজীবনে সরাসরি প্রয়োজনে আসে, এরূপ লেখনীকে প্রায়োগিক লেখা বলা হয়। যেমন: রোজনামচা বা চিঠিপত্র। প্রায়োগিক লেখায় সাধারণত লেখকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, মতামত বা ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে। প্রায়োগিক লেখায় যথেষ্ট সৃজনশীলতার পরিচয় থাকলেও এসব লেখার নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম রয়েছে। সেসব নিয়ম বা বৈশিষ্ট্য মেনেই প্রায়োগিক লেখার কাজ সম্পন্ন করতে হয়। নিচে এসব বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো-
• প্রায়োগিক লেখা বাস্তবজীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত।
• এ ধরনের লেখায় সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম বা পদ্ধতি থাকে।
• এ ধরনের লেখা ব্যক্তিগত, সামাজিক বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রয়োজনের নিরিখে হতে পারে।
• প্রায়োগিক লেখা সাধারণত স্বতন্ত্র ও সৃজনশীল হয়ে থাকে।
• এ ধরনের লেখার ক্ষেত্রে স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনায় রাখতে হয়।
• এ ধরনের লেখায় প্রয়োজনে তথ্য-উপাত্তও যুক্ত হতে পারে।
• প্রায়োগিক লেখায় স্মৃতি ও অভিজ্ঞতার পাশাপাশি লিখন-দক্ষতাও প্রয়োজন।
২) প্রাত্যহিক জীবনে রোজনামচা লেখার প্রয়োজনীয়তা/সুবিধাগুলো ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে নানারকম ঘটনা ঘটে। প্রতিদিনের
এসব ঘটনা লিখে রাখাকে বলা হয় দিনলিপি বা রোজনামচা।’ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন কাজের পাশাপাশি রোজনামচা লিখে রাখা প্রয়োজন। কারণ এর মাধ্যমে অতীতের বিভিন্ন তথ্যকে ভবিষ্যতের বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যায়।
রোজনামচা লেখা অনেক সুবিধা রয়েছে। যেমন:
i. স্মৃতির উন্নতি: নিয়মিত লেখার মাধ্যমে যেকোনো ঘটনার বিস্তারিত মনে রাখা সহজ হয়।
ii. লেখার দক্ষতা বৃদ্ধি: নিয়মিত লেখার অভ্যাস লেখার দক্ষতা উন্নত করে।
iii. পরিকল্পনা ও লক্ষ্য নির্ধারণ: দৈনন্দিন কার্যক্রম রেকর্ড করার মাধ্যমে পরিকল্পনা ও লক্ষ্য স্থির করা সহজ হয়।
iv. সৃজনশীলতা বৃদ্ধি: নতুন ধারণা এবং সৃজনশীল চিন্তা-ভাবনা বিকাশে সহায়তা করে।
এই সুবিধাগুলো রোজনামচা লেখার অভ্যাসকে ব্যক্তিগতজীবনে অনেকদিক থেকে সহায়তা করতে পারে।
বুঝে পড়ি লিখতে শিখি।
৩) রোজনামচা কাকে বলে? দিনলিপির বৈশিষ্ট্য লেখো।
আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে নানারকম ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনার কোনো কোনোটি আমরা লিখে রাখি। প্রতিদিনের ঘটা এসব ঘটনা লিখে রাখাকে ‘দিনলিপি’ বলে। দিনলিপির কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে-
• দিনলিপি সাধারণত নিত্যদিনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে লেখা হয়।
• দিনলিপিতে তারিখ ও সময় উল্লেখ করতে হয়।
• সাধারণত দিনলিপির পরিসর সংক্ষিপ্ত হয়ে থাকে। তাই মূল বিষয়টি এখানে সংক্ষিপ্ত আকারে উপস্থাপন করতে হয়।
• সাধারণত দিনলিপিতে ঘটনার বর্ণনা ধারাবাহিকভাবে লেখা হয়।
• দিনলিপিতে সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ নয়; বরং নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে ঘটনাকে বর্ণনা করা হয়।
• দিনলিপি মূলত ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধির বয়ান।
৪) নিচের শব্দগুলোর বিপরীত শব্দ লেখো।
অতিক্রম, বাধা, ইচ্ছা, প্রস্তুত, উপযুক্ত, দুঃখ, বাঁচা, প্রয়োজন, পুরানো, সম্ভব, জমা, খুশি।
অতিক্রম – অনতিক্রম
বাধা – বাধাহীন
ইচ্ছা – অনিচ্ছা
প্রস্তুত – অপ্রস্তুত
উপযুক্ত – অনুপযুক্ত
দুঃখ – সুখ
বাঁচা – মরা
প্রয়োজন – অপ্রয়োজন
পুরোনো – নতুন
সম্ভব – অসম্ভব
জমা – খরচ
খুশি – অখুশি
বুঝে পড়ি লিখতে শিখি।
৫) আগের চিঠিতে প্রেরক প্রাপককে যা জানাতে চেয়েছেন তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর: চিঠিতে প্রেরক তাঁর মাকে জানাতে চেয়েছেন যে, সব বাধা অতিক্রম করে তিনি লক্ষ্যে পৌঁছে গেছেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর উপর প্রতিশোধ নিতে নিজেকে তিনি প্রস্তুত করছেন। তবে তিনি তাঁর প্রতিশ্রুতির কথা ভোলেননি। এখন শুধু উপযুক্ত জবাব দেওয়ার পালা। বনবাদাড়ে বাস করে এখন তাঁর চেহারা জংলিদের মতো হয়ে গেছে। অবস্থা এমন যে, দেখলে মা হয়তো তাঁকে চিনবেনই না। এই জংলি ভাব তাঁর আচরণেও এসেছে। আগে তিনি যেখানে মোরগ জবাই করা দেখতে ভয় পেতেন, সেখানে তিনি এখন রক্তের নদীতে সাঁতার কাটছেন। পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা ছেলে মাকে এ-ও জানান যে, সামনের যেকোনো দিনই তাদের দেখা হতে পারে এবং সেই দিনটির জন্যই তিনি প্রহর গুনছেন। মনি ভাই তার অন্য কাজের জন্য তাদের অফিসার করেননি। এখানে তাঁর অনেক পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়েছে! পরিবারের কুশলাদি জেনে তিনি খুশি। এছাড়া মায়ের দোয়া সঙ্গে আছে বলে তাঁর মনে কোনো ভয় নেই।
৬) বিবরণমূলক লেখা বলে? একটি বিবরণমূলক লেখা লিখতে তোমাকে কী কী বৈশিষ্ট্য খেয়াল রাখতে হবে?
উত্তর: কোনো ব্যক্তি, বস্তু, স্থান, পরিস্থিতি, ঘটনা, আবেগ, অনুভূতি ইত্যাদি নিয়ে বর্ণনামূলক লেখাকেই বলা হয় বিবরণমূলক লেখা। এ ধরনের লেখার উদ্দেশ্য হলো, সকলকে সেই বিষয় সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা দেওয়া। একটি বিবরণমূলক লেখা লিখতে যেসব বৈশিষ্ট্য খেয়াল রাখতে হবে সেগুলো হলো-
• বিবরণমূলক লেখাটি হয় স্পষ্ট, সংক্ষিপ্ত ও সুনির্দিষ্ট।
• এটিতে লেখকের একটি দৃষ্টিভঙ্গি থাকে।
• এটি মূলত কোনো ব্যক্তি, বস্তু, স্থান, পরিস্থিতি, ঘটনা, আবেগ, অনুভূতি ইত্যাদির বর্ণনা।
• সাধারণত এর রচনাভঙ্গি স্বতন্ত্র হয়ে থাকে।
• এখানে লেখকের নিবিড় পর্যবেক্ষণ ফুটে উঠতে দেখা যায়।
বুঝে পড়ি লিখতে শিখি।
৭) পিরামিড.কী? এর মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলো লেখো।
উত্তর: পিরামিড হলো একটি জ্যামিতিক আকার যা সাধারণত একটি বহুভুজ বেসের ওপর ত্রিভুজাকার পৃষ্ঠ দিয়ে ঘেরা থাকে। এই পৃষ্ঠগুলো একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে মিলিত হয়।
পিরামিডের মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলো হলো-
i. বেস: এটি একটি বহুভুজ যা পিরামিডের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। যেমন: ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ ইত্যাদি।
ii. পৃষ্ঠ: বেসের চারপাশে ত্রিভুজাকার পৃষ্ঠগুলো থাকে, এগুলো চূড়ার দিকে ঝুঁকে থাকে।
iii. চূড়া: পিড়ামিডের শীর্ষস্থান যেখানে সব পৃষ্ঠ মিলিত হয়।
iv. উচ্চতা: পিরামিডের চূড়া থেকে বেসের কেন্দ্র পর্যন্ত লম্বা সরলরেখা।
প্রাচীন মিশরে পিরামিড ছিল ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বের প্রতীক। মিশরীয় ফারাওদের সমাধিস্থল হিসেবে পিরামিড ব্যবহার করা হতো।
৮) ‘পিরামিড’ রচনার মূলবক্তব্য লেখো।
পিরামিড ভ্রমণকাহিনিটিতে প্রখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী মিশরের পিরামিড সম্পর্কে বিচিত্র অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। পিরামিড পৃথিবীর একটি আশ্চর্য নিদর্শন এবং তা পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন কীর্তিগুলোর মধ্যে অন্যতম। যুগ যুগ ধরে পিরামিডের ভিতর ও বাহিরের রহস্য উদ্ঘাটন করার চেষ্টা করছে মানুষ। অনেকে পিরামিডের ভিতরে ঢুকতে চেয়েছে সম্পদের লোভে, কিন্তু নির্মাতারা এমন কৌশলে তা বানিয়েছিলেন যে সহজে কেউ যেন প্রবেশের রাস্তা না পায়। মিশরের ভিতরে বাইরে আরও পিরামিড থাকলেও গিজে অঞ্চলের তিন পিরামিডই জগৎ-বিখ্যাত। লেখক এগুলোর কথাই তুলে ধরেছেন আলোচ্য ভ্রমণকাহিনিটিতে। এ লেখাটির মাধ্যমে মূলত বিবরণমূলক লেখা সম্পর্কে একটি ধারণা দেওয়া হয়েছে।
বুঝে পড়ি লিখতে শিখি।
৯) পিরামিড একটি পুরাকীর্তি। বাংলাদেশের যেকোনো পুরাকীর্তির সঙ্গে এর মিল-অমিল খুঁজে বের করো।
উত্তর: বাংলাদেশের বিখ্যাত একটি পুরাকীর্তি হলো পাহাড়পুরের সোমপুর বিহার। পিরামিডের মতো এটিও প্রাচীন স্থাপনা। তবে পিরামিডের প্রাচীনত্বের চেয়ে এর প্রাচীনত্ব কম। পিরামিড যেমন ফারাও রাজারা তৈরি করেছেন, তেমনি সোমপুর বিহারও পাল রাজাদের কীর্তি। পিরামিডে মৃত রাজাদের দেহ মমি করে রাখা হতো, আর বিহারে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বসবাস করতেন এবং শাস্ত্রচর্চা করতেন। পিরামিড ত্রিকোণ-বিশিষ্ট, আর সোমপুর বিহারটি চতুষ্কোণ-বিশিষ্ট। পিরামিডের ভিতরে যেমন ছোটো ছোটো কুঠুরি রয়েছে, বিহারের ভিতরেও তাই। বিহারের দেয়ালে টেরাকোটা চিত্র থাকলেও পিরামিডের দেয়ালে তেমন চিত্র নেই। তবে মিশরের পিরামিড ও সোমপুর বিহার দুটিই প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন।
১০) বিশ্লেষণমূলক লেখার জন্য কিছু বৈশিষ্ট্য খেয়াল রাখা উচিত। বৈশিষ্ট্যগুলো নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর: বিশ্লেষণমূলক লেখার প্রধান শর্তই হলো এ ধরনের লেখাকে যৌক্তিক, তথ্যপূর্ণ ও বিশ্লেষণনির্ভর হতে হবে। অর্থাৎ এ ধরনের লেখায় সুনির্দিষ্ট তথ্য ও বিবরণকে পর্যবেক্ষণ করে সেখান থেকে প্রাপ্ত ধারণা প্রকাশ করা হয়। এর মধ্য দিয়ে লেখাটিতে প্রয়োজনীয় তথ্য পর্যালোচনা করে এক বা একাধিক যৌক্তিক সিদ্ধান্তে আসা যেতে পারে। বিশ্লেষণমূলক লেখার বেশকিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এগুলো হলো-
• এ ধরনের লেখায় যুক্তিনির্ভর ও বিশ্লেষণমূলক আলোচনা বা
• মতামত প্রাধান্য পায়। বিশ্লেষণমূলক লেখায় প্রয়োজনে তথ্য-উপাত্ত বা ছক ও সারণি ব্যবহার করা হয়।
• এ ধরনের লেখায় সুনির্দিষ্ট বিষয়ের উপর পর্যালোচনা, মতামত, বা প্রতিক্রিয়া থাকে।
• এ ধরনের লেখায় ব্যক্তিগত মতামতের সুযোগ কম থাকে।
• বিশ্লেষণমূলক লেখা দুই রকমের হয়ে থাকে। ১. তথ্য বিশ্লেষণমূলক ২. উপাত্ত বিশ্লেষণমূলক।
• বিশ্লেষণমূলক লেখায় মতামত নেওয়া হয় তথ্য ও উপাত্ত পর্যালোচনার উপর ভিত্তি করে।
বুঝে পড়ি লিখতে শিখি।
১১) প্রাচীন বাঙালির খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে কী জানতে পেরেছ লেখো?
উত্তর: প্রাচীন সাহিত্য থেকে বাঙালির খাদ্যাভ্যাসের একটি তালিকা পাওয়া যায়। সেই তালিকায় কী নেই! ভাত, মাছ, মাংস, শাক- সবজি, সবই আছে সেই তালিকায়। সরু সাদা চালের ভাত ছিল বেশি প্রিয়। কলার পাতায় তারা গরম ভাত খেত। সাথে কখনো থাকত গাওয়া ঘি বা দুধ আর কখনো মাছ, মাংস বা সবজি। মাছ বাঙালির প্রিয় ছিল সবসময়। বিভিন্ন প্রজাতির মাছ খেত বিশেষ করে মৌরলা মাছ ও ইলিশ মাছ। তরকারি হিসেবে বিভিন্ন ধরনের শাক- সবজি খেত তারা। বিশেষ করে নালিতা শাক, লাউ আর বেগুন ছিল প্রিয়। মাংসের মধ্যে ছাগলের মাংস সবাই খেত আবার বিশেষ উৎসবে পাখির মাংস ও হরিণের মাংস খাওয়া হতো। পায়েস, ছানা, বাতাসা, খাজা, মোয়া, নাড়ু ও নানারকম পিঠা ছিল বেশ প্রিয়। মশলা দেওয়া পানও খেতে পছন্দ করত অনেকে।