বাংলা ভাষা
পৃথিবীতে বর্তমানে প্রচলিত সাড়ে তিন হাজারের অধিক ভাষার একটি বাংলা। ভাষাভাষী জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলার স্থান পৃথিবীতে চতুর্থ। পৃথিবীব্যাপী প্রায় পঁচিশ কোটি লোকের মুখের ভাষা বাংলা। বাংলা বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা। বাংলাদেশ ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের জনসাধারণ এবং ত্রিপুরা, বিহার, উড়িষ্যা ও আসামের কয়েকটি অঞ্চলের মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে।
বাংলা ভাষার উদ্ভব
১. ভাষার মূল উপাদান- ধ্বনি
২. ভাষার মূল উপকরণ- বাক্য
৩. মৈথিলী ও বাংলা ভাষার সংমিশ্রণে সৃষ্ট ভাষার নাম- ব্রজবুলি ভাষা।
৪. বুদ্ধদেবের নির্দেশে যে ভাষা জন্ম লাভ করে- পালি ভাষা।
৫. বাংলা ভাষা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা গোষ্ঠীর অন্তর্গত।
৬. ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এর মতে বাংলা ভাষার জন্ম হয় গৌড়ীয় অপভ্রংশ থেকে ৬৫০ খ্রিষ্টাব্দে অর্থাৎ সপ্তম শতাব্দীতে।
৭. ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় এর মতে বাংলা ভাষার জন্ম হয় ৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে অর্থাৎ দশম শতকে মাগধী অপভ্রংশ থেকে।
৮. বাংলা ভাষার ভগ্নি সম্পর্কীয় ভাষা সমূহ হল অসমিয়া ও উড়িয়া।
৯. বাংলা ভাষার উদ্ভব ও বিকাশ সম্পর্কে ড. সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় একটি বই লিখেন যার নাম ‘Origin and Development of Bengali Language. (ODBL)’
১০. বাংলা লিপির অব্যবহিত পূর্বের রূপ ছিল কুটিল লিপি।
১১. বাংলা লিপি বিকাশের ক্রমঃ ব্রাহ্মী লিপি> পূর্বী লিপি > কুটিল লিপি > বাংলা লিপি।
বাংলা লিপির উদ্ভব
১. ভারতীয় লিপিমালার প্রাচীনতম রূপ দু’টি। যথাঃ ক. ব্রাহ্মী লিপি ও খ. খরোষ্ঠী লিপি।
২. ব্রাহ্মী লিপি হতে আবার তিনটি লিপির উদ্ভব হয়েছে। যথাঃ ক. পশ্চিমা লিপি/সারদা ও খ. মধ্যভারতীয় লিপি/নাগর এবং গ. পূর্বী লিপি/কুটিল।
৩. বাংলা লিপির অব্যবহিত পূর্বের রূপ ছিল কুটিল লিপি।
৪. বাংলা লিপি বিকাশের ক্রমঃ ব্রাহ্মী লিপি> পূর্বী লিপি > কুটিল লিপি > বাংলা লিপি।
৫. খরোষ্ঠী লিপিতে লিপিমালা ডান দিকে থেকে বাম দিকে লেখা হয়।
৬. বাংলা বর্ণমালা গঠন কাজ শুর হয় সেন যুগে এবং তা স্থায়ী রূপ লাভ করে পাঠান যুগে।
৭. শ্রীরামপুর মিশনে মুদ্রণ যন্ত্র স্থাপিত হয়- ১৮০০ সালে।
৮. যে সব ভাষার লিপিতে বাংলা লিপির স্পষ্টে প্রভাব আছে- মনিপুরি, ওড়িয়া, মৈথিলি,অসমিয়া।
৯. ব্রাহ্মী লিপি লেখা হয় – বামদিক থেকে ডানদিকে।
১০. খরোষ্ঠী লিপি লেখা হয় – ডানদিক থেকে বামদিকে।
১১. বাংলা লিপিকে ছাপাখানায় মুদ্রণযোগ্য করে তৈরি করেন- পঞ্চানন কর্মকার(ইংরেজ আমলে)।
১২. পঞ্চানন কর্মকার ইংরেজ কর্মচারী চার্লস উইলকিন্সের কাছ থেকে বাংলা লিপি তৈরির কৌশল শিখেছিলেন।
১৩. এই উপমহাদেশের আর্য ভাষার প্রাচীনতম বর্ণমালার সন্ধান পাওয়া যায় খৃষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকে অশোকের শাসনামলে।
১৪. মনিপুরি, উড়িয়া, মৈথিলি এবং অসমিয়া ভাষার লিপিতে বাংলা লিপির স্পষ্ট প্রভাব রয়েছে।
১৫. উপমহাদেশে প্রথম ছাপাখানা স্থাপিত হয় ১৪৯৮ সালে গোয়ায়। এটি ছিল পর্তুগিজ ভাষার মুদ্রণযন্ত্র।
১৬. ১৭৭৮ সালে উইলকিন্স হুগলিতে প্রথম বাংলা মুদ্রণযন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন।
১৭. বাংলাদেশে প্রথম মুদ্রণযন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৪৭ সালে রংপুরে ‘বার্তাবহ যন্ত্র’ নামে।
বাংলা ভাষার রূপ
বাংলা, ইংরেজি, আরবি, হিন্দি প্রভৃতি ভাষায় সাধারণত দু’টি রূপ বিদ্যমান।
১) মৌখিক বা কথ্য রূপ
২) লৈখিক বা লেখ্য রূপ
মৌখিক ও লৈখিক উভয় রূপেরই দুটি করে রীতি প্রচলিত রয়েছে।
১) মৌখিক বা কথ্য রূপ:
ক) চলিত রীতি/সর্বজন স্বীকৃত আদর্শ চলিত রূপ/ প্রমিত চলিত রীতি
খ) আঞ্চলিক কথ্যরীতি/উপভাষা
২) লৈখিক বা লেখ্য রূপ :
ক) সাধু রীতি/সর্বজন স্বীকৃত লেখ্যরূপ
খ) চলিত রীতি/সর্বজন স্বীকৃত আদর্শ চলিত রূপ/ প্রমিত চলিত রীতি
প্রশ্নোত্তরে বাংলা ভাষার রূপ
প্রশ্নঃ বাংলা ভাষা ব্যবহারের রীতি কয়টি?
উত্তর- দুইটি। (১) কথ্য ও (২) লেখ্য।
প্রশ্নঃ আঞ্চলিক ভাষার আরেকটি নাম কী?
উত্তর- উপভাষা।
প্রশ্নঃ উপভাষার ইংরেজি কী হবে?
উত্তর- Dialect.
প্রশ্নঃ কোন ভাষার সাহিত্যে গাম্ভীর্য ও আভিজাত্য প্রকাশ পায়?
উত্তর- সাধু ভাষায়।
প্রশ্নঃ ভাষার মৌলিক রীতি কোনটি?
উত্তর- লেখ্য।
প্রশ্নঃ কোনটি সাধু ভাষার নিজস্ব বিশেষ বৈশিষ্ট্য?
উত্তর- তৎসম শব্দবহুলতা।
প্রশ্নঃ চলিত ভাষার রীতি চালু করেন কে?
উত্তর- প্রমথ চৌধুরী।
প্রশ্নঃ বাংলা ভাষায় যতি চিহ্নের প্রবর্তন করেন কে?
উত্তর- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।
প্রশ্নঃ সাধু ভাষায় কোন পদ বিশেষ রীতি মেনে চলে?
উত্তর- সর্বনাম ও ক্রিয়া।
প্রশ্নঃ ভাষার কোন রীতি পরিবর্তনশীল?
উত্তর- চলিত রীতি।
প্রশ্নঃ বাংলা ভাষার মৌলিক অংশ কয়টি?
উত্তর- ৪টি। (১) ধ্বনি, (২) শব্দ, (৩) বাক্য ও (৪) অর্থ।
Views: 5