বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
অধ্যায়: ২
বাংলাদেশের স্বাধীনতা
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
১. গণযুদ্ধ কী?
উত্তর: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এ ভূখণ্ডের সর্বস্তরের বাঙালি অংশগ্রহণ করে বলে এই যুদ্ধকে ‘গণযুদ্ধ’ বা ‘জনযুদ্ধ’ বলে।
২. মুক্তিফৌজ কারা?
উত্তর: ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া বাঙালি সেনা, গেরিলা ও সাধারণ যোদ্ধার সমন্বয়ে গঠিত বাহিনীকে মুক্তিফৌজ বলে।
৩. রেসকোর্স ময়দানের বর্তমান নাম কী?
উত্তর: রেসকোর্স ময়দানের বর্তমান নাম সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।
৪. অপারেশন সার্চলাইট‘ কাকে বলে?
উত্তর: ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর যে বর্বরতম হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল তার নাম ছিল ‘অপারেশন সার্চলাইট’।
৫. মুজিবনগর সরকারের অর্থমন্ত্রী কে ছিলেন?
উত্তর: মুজিবনগর সরকারের অর্থমন্ত্রী ছিলেন এম. মনসুর আলী ।
৬. যৌথ কমান্ড কী?
উত্তর: মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনী মিলে যে কমান্ড গঠন করে তাকে ‘যৌথ কমান্ড’ বলে।
৭. পেশাজীবী কারা?
উত্তর:সাধারণ অর্থে যারা বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত তারাই হলেন পেশাজীবী। যেমন: শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিল্পী, সাহিত্যিক, আইনজীবী ও সাংবাদিকসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ।
৮. মুজিবনগর সরকারের প্রধান উদ্দেশ্য কী ছিল?
উত্তর: মুজিবনগর সরকারের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধকে সঠিকভাবে পরিচালনা, সুসংহত করা এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্বজনমত গঠন করা।
৯. মুক্তিযুদ্ধকালীন ‘চরমপত্র‘ কী?
উত্তর: ‘চরমপত্র’ হলো মুক্তিযুদ্ধকালীন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে প্রচারিত অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি অনুষ্ঠান।
১০. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে কী নামে আখ্যা দেওয়া হয়েছে?
উত্তর: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ‘জনযুদ্ধ’ বা ‘গণযুদ্ধ’ নামে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
১১. মুজিবনগর সরকারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান কোথায় হয়েছিল?
উত্তর: মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে মুজিবনগর সরকারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান হয়েছিল।
১২. কখন অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়?
উত্তর:অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয় ১৯৭১ সালের ২ মার্চ।
১৩. মুক্তিযুদ্ধ কতমাস স্থায়ী হয়েছিল?
উত্তর: মুক্তিযুদ্ধ দীর্ঘ নয় মাস স্থায়ী হয়েছিল।
১৪. কত হাজার সৈন্য নিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে?
উত্তর: ৯৩ হাজার সৈন্য নিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে।
১৫. বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশ কোনটি?
উত্তর: বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশ হলো মুক্তিযুদ্ধ।
১৬. ১৭ই মার্চ, ১৯৭১ “অপারেশন সার্চলাইট’ পরিচালনার নীলনকশা তৈরি করে কে?
উত্তর: ১৭ই মার্চ, ১৯৭১ টিক্কা খান ও রাও ফরমান আলী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ পরিচালনার নীলনকশা তৈরি করে।
১৭. কোন শহরে ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ এর আয়োজন করা হয়েছিল?
উত্তর: যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ এর আয়োজন করা হয়েছিল।
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
১. মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসীদের ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালিরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠন, অর্থ সংগ্রহ ও কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনকে ত্বরান্বিত করেন।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রবাসী বাঙালিরা নানাভাবে সাহায্য- সহযোগিতা করেছেন। তাঁরা বিভিন্ন দেশে মুক্তিযুদ্ধের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছেন, বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন আদায়ে বিভিন্ন দেশের পার্লামেন্ট সদস্যদের নিকট গিয়েছেন এবং আন্তর্জাতিক সংস্থায় প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছেন। বিশেষ করে ব্রিটেন ও আমেরিকার প্রবাসী বাঙালিরা পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহ না করার জন্য বিভিন্ন সরকারের কাছে আবেদন জানান। তাঁদের এই নিরলস প্রচেষ্টার ফলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্ব জনমত গড়ে ওঠে, যা আমাদের বিজয়কে সহজতর করে।
২. অপারেশন সার্চলাইট বলতে কী বুঝায়?
উত্তর: ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক নিরস্ত্র বাঙালির ওপর পরিচালিত বর্বরোচিত গণহত্যার সাংকেতিক নামই হলো ‘অপারেশন সার্চলাইট।
এই অভিযানের নীলনকশা ১৯৭১ সালের ১৭ই মার্চ টিক্কা খান ও রাও ফরমান আলী তৈরি করেন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ ক্যাম্প, পিলখানা, ইপিআর ক্যাম্প ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আক্রমণ চালায় এবং নৃশংসভাবে গণহত্যা ঘটায়। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই ভয়াবহ রাতটি ‘কালরাত্রি’ নামে পরিচিত।
৩. যৌথ কমান্ড গড়ে তোলা হয়েছিল কেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সম্মিলিতভাবে আক্রমণের মাধ্যমে চূড়ান্ত পরাজিত করার লক্ষ্যে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনী মিলে ‘যৌথ কমান্ড’ গড়ে তোলা হয়েছিল।
মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে পাকিস্তান ভারতে বিমান হামলা চালালে যুদ্ধ নতুন মাত্রা পায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারত ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে এবং মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর সমন্বয়ে একটি ‘যৌথ কমান্ড’ গঠন করা হয়। এই যৌথ বাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণের ফলেই পাকিস্তানি বাহিনীর ৯৩ হাজার সদস্য আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় এবং বাংলাদেশ চূড়ান্ত বিজয় লাভ করে।
৪. জনগণকে মুক্তিযুদ্ধের মূল নিয়ামক শক্তি বলা হয় কেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ছাত্র, পেশাজীবী, নারী, কৃষক- শ্রমিকসহ সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা করেছিল বলেই জনগণকে মুক্তিযুদ্ধের মূল নিয়ামক শক্তি বলা হয়।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সর্বস্তরের জনসাধারণ নিজ নিজ অবস্থান থেকে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেওয়া, খাবার ও ঔষধ সরবরাহ করা, শত্রুর অবস্থান সম্পর্কে তথ্য দেওয়া অর্থাৎ সহযোগিতামূলক কাজগুলো করেছে। মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহিদের মধ্যে সাধারণ মানুষের সংখ্যাই ছিল সর্বাধিক। জনগণের এই স্বতঃস্ফূর্ত ও সর্বাত্মক অংশগ্রহণের ফলেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধ একটি ‘গণযুদ্ধে’ পরিণত হয়েছিল এবং বিজয় অর্জন সম্ভব হয়েছিল।
৫. মুক্তিযোদ্ধাদের ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব নয় কেন?
উত্তর: দেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের অসীম সাহসিকতা, আত্মত্যাগ এবং জীবনের বিনিময়ে অর্জিত অবদানের কারণেই তাঁদের ঋণ কোনোদিন পরিশোধ করা সম্ভব নয়।
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমণের বিরুদ্ধে বাঙালিরা সাহসিকতার সাথে রুখে দাঁড়ায়। মুক্তিযোদ্ধারা দেশকে শত্রুমুক্ত করার লক্ষ্যে মৃত্যুকে তুচ্ছ মনে করে যুদ্ধে যোগদান করেছিলেন। দেশের জন্য যুদ্ধ করতে গিয়ে বহু মুক্তিযোদ্ধা বিভিন্ন রণাঙ্গনে শহিদ হন এবং আরও অনেকে মারাত্মকভাবে আহত হন। দেশপ্রেমিক এই বীরদের সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়েই স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে, তাই জাতি তাঁদের কাছে চিরঋণী।
৬. মুক্তিযুদ্ধে গণমাধ্যমের ভূমিকা ছিল অপরিসীম – ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সংবাদপত্র এবং বিশেষ করেছে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র জনগণকে অনুপ্রাণিত করার মাধ্যমে ও মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস জুগিয়ে বিজয়ের পথ সুগম করেছিল। মুক্তিযুদ্ধকালে গণমাধ্যম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
২৬শে মার্চ চট্টগ্রাম বেতারের শিল্পী ও সংস্কৃতি কর্মীরা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র চালু করেন, যা পরে মুজিবনগর সরকারের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। এই বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত সংবাদ, দেশাত্মবোধক গান, মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা ও রণাঙ্গনের নানা ঘটনা সাধারণ মানুষকে যুদ্ধের প্রতি অনুপ্রাণিত করত এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস জুগিয়ে বিজয়ের পথকে সহজ করে তুলেছিল।
৭. মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রসমাজ কীভাবে ভূমিকা রেখেছিল?
উত্তর: মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রসমাজ সরাসরি রণাঙ্গনে যুদ্ধ করে এবং বিভিন্ন বাহিনীতে যোগদানের মাধ্যমে গৌরবোজ্জ্বল ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল।
১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের একটি বিরাট অংশ সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়। অনেকে ভারতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ শেষে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করে। মুক্তিবাহিনীতে একক গোষ্ঠী হিসেবে ছাত্র- ছাত্রীদের সংখ্যাই ছিল সবচেয়ে বেশি। মুক্তিযুদ্ধে ছাত্র সমাজের এই মহান আত্মত্যাগ ছাড়া স্বাধীনতা অর্জন কঠিন হতো।
৮. স্বাধীনতা যুদ্ধে জাতিসংঘ নীরব ছিল কেন?
উত্তর: বাংলাদেশের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি, কারণ সংস্থাটির নিজস্ব উদ্যোগ গ্রহণের ক্ষমতা বৃহৎ শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর ‘ভেটো’ ক্ষমতার দ্বারা সীমাবদ্ধ ছিল।
বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা জাতিসংঘের মূল লক্ষ্য হলেও, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে সংস্থাটি নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। পাকিস্তানি বাহিনী কর্তৃক পরিচালিত নারকীয় হত্যাযজ্ঞ ও মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এর মূল কারণ হলো, ‘ভেটো’ ক্ষমতাসম্পন্ন পাঁচটি বৃহৎ শক্তিধর রাষ্ট্রের বাইরে জাতিসংঘের নিজস্ব উদ্যোগে কোনো সিদ্ধান্ত কার্যকর করার ক্ষমতা অত্যন্ত সীমিত।
৯. ২৫শে মার্চের রাতকে ‘কালরাত্রি’ বলা হয় কেন?
উত্তর: ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামক পরিকল্পনার মাধ্যমে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ইতিহাসের এক বর্বরতম ও নৃশংস গণহত্যা পরিচালনা করে বলে এই রাতকে ‘কালরাত্রি’ বলা হয়।
ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে ঐ রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ ক্যাম্প, পিলখানা ইপিআর ক্যাম্প ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আক্রমণ চালায় এবং নৃশংসভাবে গণহত্যা ঘটায়। বাংলাদেশের ইতিহাসে ২৫শে মার্চের এই ভয়াবহ রাতটি ‘কালরাত্রি’ নামে পরিচিত।
১০. বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে মুজিবনগর সরকার কেন গঠন করা হয়েছিল?
উত্তর: মুক্তিযুদ্ধকে সঠিকভাবে পরিচালনা ও সুসংহত করা এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্বজনমত গঠনের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয়েছিল।
এটি ছিল বাংলাদেশের প্রথম সরকার, যা ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল ১৯৭০-এর নির্বাচনে বিজয়ী জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হয়। এই সরকার গঠনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের একটি সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক ভিত্তি তৈরি হয়, যা মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা, আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায় এবং স্বাধীনতা অর্জনকে একটি সুসংগঠিত রূপ দান করে।
১১. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নারীদের ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: মুক্তিযুদ্ধে নারীরা সরাসরি রণাঙ্গনে যুদ্ধ করার পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা, আশ্রয় ও তথ্য দিয়ে এবং অসামান্য ত্যাগের মাধ্যমে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধা শিবিরে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও অস্ত্রচালনা ও গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়ে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। এ ছাড়াও অগণিত নারী আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা- শুশ্রূষা করা, মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেওয়া এবং শত্রুপক্ষের তথ্য সরবরাহ করার মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। পাকিস্তানি বাহিনীর দ্বারা প্রায় তিন লাখ নারী নির্যাতিত হন; তাঁদের এই ত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাঁদের ‘বীরাঙ্গনা’ উপাধিতে ভূষিত করেন।
১২. মুক্তিযুদ্ধে শিল্পী, সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: শিল্পী-সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীরা তাঁদের লেখনী, গান ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের মানসিক ও নৈতিক বল জুগিয়ে অত্যন্ত প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেন।
পত্র-পত্রিকায় লেখা, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে প্রচারিত দেশাত্মবোধক গান, কবিতা, নাটক এবং ‘চরমপত্র’-এর মতো জনপ্রিয় অনুষ্ঠান মুক্তিযুদ্ধকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করেছে। এসব সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড রণক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের মানসিক ও নৈতিক শক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করেছে, তাঁদের সাহস জুগিয়েছে এবং সাধারণ জনগণকে শত্রুর বিরুদ্ধে দুর্দমনীয় করে তুলেছে।
১৩. মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলা বেতারের ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র সংবাদ, দেশাত্মবোধক অনুষ্ঠান এবং রণাঙ্গনের খবর প্রচার করে সাধারণ মানুষকে যুদ্ধের প্রতি অনুপ্রাণিত করার মাধ্যমে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল বৃদ্ধিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল।
১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ চট্টগ্রাম বেতারের শিল্পী ও সংস্কৃতি কর্মীরা এই বেতার কেন্দ্র চালু করেন, যা পরে মুজিবনগর সরকারের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। এই কেন্দ্র থেকে প্রচারিত সংবাদ, দেশাত্মবোধক গান, মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা ও রণাঙ্গনের নানা ঘটনা সাধারণ মানুষকে যুদ্ধের জন্য অনুপ্রাণিত করত। এটি মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস জুগিয়ে বিজয়ের পথ সুগম করেছিল।